ঢাকামঙ্গলবার , ১১ অগাস্ট ২০২০
  • অন্যান্য
আজকের সর্বশেষ খবর

গাভীর দুধ দোহন সময় যেসকল নিয়ম না মানলে বড় ক্ষতি হতে পারে ডেইরি ফার্মে

Admin
অগাস্ট ১১, ২০২০ ২:৫৩ অপরাহ্ন । ৮৩৪ জন
Link Copied!
সোনাল কৃষি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন আমাদের ফেসবুক পেজ টি

গাভীর ওলান থেকে দুধ বের করার পদ্ধতিকে দুধ দোহন বলে। দুধ দোহনে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার প্রয়ােজন হয়। গােয়ালার নিকট দুধ দোহন একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। দুধ একটি আদর্শ খাদ্য হলেও গাভীর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাবে এবং দুধ দোহনে অসাবধানতার কারণে দুধ নষ্ট হতে পারে। অসাবধানভাবে দুধ দোহনের সময়ই অসংখ্য ক্ষতিকর জীবাণু তরল দুধে সংক্রামিত হয়। ফলে অতি আদর্শ খাদ্য দুধে জীবাণু এত দ্রুত বৃদ্ধি পায় যে দুধের গুণাগুণ অতি সহজেই নষ্ট হয়ে যায়। দুধ দোহনের প্রথম হতে শেষ পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবস্থাগুলো যদি অবলম্বন করা হয় তা হলে এ মূল্যবান আদর্শ খাদ্যের গুণাগুণ তাড়াতাড়ি নষ্ট হতে পারে না। সাধারণত আমাদের অভিজ্ঞতা অথবা অবহেলার জন্য এ আদর্শ খাদ্যের গুণাগুণ নষ্ট হয়ে থাকে। গাভী থেকে পরিমিত দুধ সংগ্রহ করার জন্য দোহন প্রক্রিয়ার গুরুত্ব অনেক। গাভীর ওলানে যথেষ্ট দুধ দোহন থাকা সত্ত্বেও দুধ দোহন পদ্ধতি না জানার ফল্ব ঠিক মত এবং সঠিক পরিমাণে দুধ সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। একটি সুনির্দিষ্ট নিয়ে দ্রুত দুধ দোহন করা যেমন দোহনকারীর নিকট আনন্দদায়ক তেমনি গাভীর নিকট ও তা পছন্দনীয়। সুষ্ঠু ভাবে দুধ দোহনের জন্য অত্যাবশ্যক কার্যক্রম সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলঃ

১। উপযুক্ত পারিপার্শ্বিক অবস্থাঃ

  • উচচ শব্দ, কুকুর, আগন্ভক, অযথা চিকিৎসা ও অন্যন্য উন্মুত্ততা অবশ্যই পরিহার করতে হবে।
  • আরামদায়ক ও সন্ভুষ্ট অবস্থায় দুধ দোহন করা উত্তম। ঘরের পরিবেশ শান্ত ও নিরুদ্রপ হওয়া বঞ্চনীয়।

২। দুধ দোহনে নিয়মনিষ্ঠাঃ

  • গাভী যেহেতু অভ্যাসে বশীভূত হয় সেহেতু দুধ দোহনের একটি তালিকা অনুসরণ করা প্রয়োজন।
  • নিয়মিত বিরতি সহকারে সাধারণত দিনে দুবার গাভীর দুধ দোহন করা সাধারণত ১২ ঘন্টা অন্তর অন্তর দুধ দোহন করা উত্তম। তবে ১১ ঘন্টা বা ১৩ ঘন্টার শিডিউল করা যেতে পারে।
  • অধিক দুধ উৎপাদনকারী বিদেশী জাতের গাভী ২৪ ঘন্টায় দুধ দোহনের সময় পরিবর্তনের দুধের মোট উৎপাদন হ্রাস পায়।

৩। দুগ্ধবতী গাভী ও দোহনকারীর প্রস্তুতিঃ

  • দুধ দোহনের জন্য দোহাল ও গাভী একে অপরের পছন্দীয় হওয়া বাঞ্ছনীয়। দুধ দোহণের পূর্বে কোন ক্রমে গাভীকে পিটানো উচিৎ নয়। কারণ গাভীকে পিটালে গাভী ঠিকমত দুধ নামায় না।
  • দুধ দোহনের পূর্বে গাভীর ওলান ও বাঁট জীবানুনাশক পদার্থ মিশ্রিত পানি
  • দিয়ে ধুয়ে শুকনাে নরম কাপড় দিয়ে মুছে নেওয়া উত্তম।
  • গাভীর ওলান উপযােগী জীবানু নাশক পদার্থ মিশ্রিত ঈষৎ উষ্ণ পানি দিয়ে ধুয়ে দিলে শুধু পরিস্কার হয় না বরং ওলানে দুধ নামতে সাহায্য করে।
  • ওলান পরিষ্কার করার পর সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য দুধ নামে। তাই ওলান মুছার পরপরই দুধ দোহন করতে হবে।
  • দুগ্ধ দোহনকারীর নখ কেটে ছােট রাখতে হবে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কাপড় পরবে। চুল টুপি বা কাপড় দিয়ে বেঁধে রাখবে। দুধ দোহনকারীর নােংরা স্বভাব যেমন-থুথু ফেলা, নাক ডাকা, নাকঝাড়া, ও দুধ দোহনের সময় কথা বলা গাভীর নিকট বিরক্তিকর।

৪। পরিষ্কার বাসনপত্রের ব্যবহারঃ

  • দুধ দোহন পাত্র অবশ্যই পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়। এছাড়া বড় মুখ বিশিষ্ট খােলা বালতি অপেক্ষা গম্বুজ আকৃতির দুধ দোহন পাত্র অধিক উপযােগী।
  • প্রতিবার দুধ দোহানাের পর পাত্রটি প্রথমে গরম পানি ও পরে ঠান্ডা পানি দিয়ে উত্তমরুপে পরিষ্কার করতে হবে। পরবর্তীতে র্যাকে উল্টিয়ে রাখলে পাত্র শুকিয়ে যায়।

৫। দ্রুত দুধ দোহনঃ

  • বাঁটে দুধ নামার ৩-৭ মিনিটের মধ্যে ওলানের সমস্ত দুধ দোহন করে নেওয়া প্রয়ােজন।
  • ওলানের সমস্ত দুধ দোহন না করলে ওলানের অবশিষ্ট দুধে জীবানুর বংশ বিস্তার ঘটে ফলে ঠুনকো রােগ (Mastitis) হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

৬। দোহনকালে খাওয়ানোঃ

  • গাভীর দৈনিক রেশনের দানাদার খাদ্যে কিছু অংশ দুধ দোহনের সময় খেতে ব্যস্ত রাখলে ওলানের সমস্ত দুধ দোহন সহজ হয়।

৭। দুধ দোহনের ক্রম পদ্ধতিঃ

ম্যাস্টাইটস রােগে আক্রান্ত গাভী থেকে সুস্থ গাভীতে জীবাণু ছড়ায়। তাই প্রথমে সুস্থ গাভী ও পরে রােগাক্রান্ত গাভী দোহন করা উচিত।

ম্যাস্টাইটিস রােগ নিয়ন্ত্রণের জন্য গাভীর পালে একটি সুনির্দিষ্ট নিয়মে দুর্ধ দোহন করা বাঞ্ছনীয়।

যেমন-

  • প্রথমত: ম্যাস্টাইটিস রােগ মুক্ত বকনা গাভা
  • দ্বিতীয়ত, ম্যাস্টাইটিস রােগ মুক্ত সম্পূর্ণ সুস্থ গাভী
  • তৃতীয়ত: যেসব গাভী। পূর্বে ম্যাস্টাইটিস রােগে ভুগেছে কিন্তু এখন রােগমুক্ত এমন গাভী
  • চতুর্থত: সন্দেহযুক্ত অস্বাভাবিক দুধ উৎপাদনকারী গাভী এবং
  • সর্বশেষে রােগাক্রান্ত গাভীর দুধ দোহন করতে হবে

৮। বকনা গাভীর প্রথম দুধ দোহনঃ

  • গাভীর প্রথম বাচ্চার পরে বাট খাটো থাকে ফলে টিটকাপ পরানাে অসুবিধা হয়।
  • বকনার প্রথম বাচ্চা দেবার পর ওলানে দুধ তুলে রাখে সেক্ষেত্রে দুধ দোহনের ২-৩ মিনিট পূর্বে ২ মি: লি: অক্সিটোসিন মাংসে ইনজেকশন দিলে কার্যকর হয়।
  • দুই বা তিনদিন এভাবে অন্সিটোসিন ইনজেকশন দিলে সঠিকভাবে দুধ দোহান যায়।

৯। দুধ দোহন প্রক্রিয়াঃ

প্রধানত বাছুরের সহায়তায় হাতের মাধ্যমে ও দুধ দোহন যন্ত্রের সাহায্যে গাভীর দুধ দোহন করা যায়। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে হাতের সাহায্যে দুধ দোহন করা হয়। এছাড়া বৃহৎ খামারে বিদেশী জাতের গাভী দোহনের জন্য যন্ত্রের

সাহায্য নেওয়া হয়।

(ক) হাতের সাহায্যে দুধ দোহন:

  • গাভীর সাধারণত বামপাশ থেকে দুধ দোহন করা হয়। বাটে দুধ আসার সাথে সাথে দুধ দোহন কাজ শুরু করতে হয়।
  • সাধারণত স্টাইপিং এবং ফুল হ্যান্ড পদ্ধতিতে তর্জনী ও বুড়া আঙ্গুলের সাহায্যে দুধ দোহন করা যায়। ফুল হ্যান্ড পদ্ধতিতে হাতের ৫ আঙ্গুল ও হাতের তালুরচাপের মাধ্যমে দুধ দোহন করা হয়।
  • অনেক দুধ দোহনকারী বুড়াে আঙ্গুল বাঁকা করে দুধ দোহন করে। এ পদ্ধাতিতে দুধ দোহন ঠিক নয়। কারণ এই রূপ দুধ দোহনে বাটে ক্ষতের সৃষ্টি হতে পারে।
  • অজ্ঞাতবশত গ্রামাঞ্চলে অধিকাংশ গােয়ালা দোহন কাজে সুবিধার জান্য রিন এইরূপ করলে বাটে অসবিধা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই শুষ্ক
  • আঙ্গুলে দুধ, পানি বা থুথু লাগিয়ে দুধ দোহন করে। এরকম করা ঠিক নয়।
  • আঙ্গুলে দুধ দোহন সর্বোত্তম তবে বাঁটে ক্ষত থাকলে জীবানুনাশক মলম বা ক্রিম ব্যবহার করে দুধ দোহন করা যায়।

(খ) যন্ত্রের সাহায্যে দুধ দোহনঃ যন্ত্র সাহায্যে দুধ দোহন নিম্নোক্তভাবে করা যায়-

(১) স্ট্রিপ কাপ (Strip cup)

গাভীর বাটে দুধ দোহানাের য্রের টিট কাপস লাগানাের পূর্বে একটি টিট কাপে প্রধানত নিম্নোক্ত তিনটি কারণে প্রতিটি বাঁট থেকে দুধ টেনে দেখা প্রয়ােজন।

  • বাঁটের বেষ্টক পেশী উম্মুক্ত করে ফলে দ্রুত দুধ বের হয়।
  • দুধকে অতিরিক্ত ব্যাকটেরিয়া থেকে মুক্ত করে।
  • অস্বাভাবিক দুধের উপস্থিতি সনাক্ত করা যায়। যে গাভীর অস্বাভাবিক দুধ হবে সে গাভীকে ম্যাস্টাইটন রােগের জন্য পরীক্ষা করতে হবে এবং সবশেষে দুধ দোহন করা হবে।

(২) স্ট্রিপিং (Stripping):

  • বাঁটে ক্ষত বা অস্বাভাবিক বাঁটের গঠন ছাড়া এক হাতে টিট কাপ এবং অন্য হাতে টিট ধরে টিট কাপের মধ্যে প্রবেশ করাতে হবে।
  • বাঁটের দুধ দোহন শেষ হবার সাথে সাথে টিটকাপ খুলে নিতে হবে।
  • দুধ দোহনের পরও টিট কাপ বাঁটে থাকলে দীর্ঘায়িত ভ্যাকিয়াম বাঁটে আগাত বা ক্ষতের সৃষ্টি করে ফলে সহজেই দুধে জীবানুর সংক্রমন ঘটে।

ডাঃ শ্রাবণ হাসান সজল, এডমিন (সোনালি কৃষি)

error: Content is protected !! Don\'t try to copy!!!